img

বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভেদ ভুলে ধানের শীষের জন্য রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সবকটি আসনে বিএনপি জয়লাভের আশা করলেও জামায়াত চারটিতে জয়ের আশা করছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি এনসিপি, নাগরিক ঐক্য, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাসদ ও অন্যসব দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খোলাধুলায় তারা অংশ নিচ্ছেন। জোট বেঁধে নেতাকর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেকে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে কোটিপতি বনে গেছেন বলে প্রচারণা রয়েছে। আবার অনেকে বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারও কারও বাড়িঘর ও কর্মস্থলে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী ঘরানার ভোটাররা বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। তারা অনেকটা নিশ্চুপ রয়েছেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জামায়াত থেকে মামলা-হামলা না হওয়ায় তারা তাদের সুনজরে আছে। আওয়ামী ঘরানার বিপুল সংখ্যক ভোট জামায়াতের পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তারা বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে চারটিতে জয়ের ব্যাপারে প্রচণ্ড আশাবাদি।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, বগুড়া জেলায় তাদের সংগঠনের কে সন্ত্রাসী, কে অপরাধী, কে অবৈধ আয় করেছে, কে প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন-তা সবাই জানে। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা বা তাদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিলেও তারা কষ্ট পেতেন না। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গণহারে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে মামলা দেওয়া হয়েছে। মব সৃষ্টি করে অনেককে নির্যাতনের পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের অধিকাংশ বাড়িঘর পুরুষশূন্য। মামলা ও হামলার ভয়ে তারা পালিয়ে রয়েছেন। আদালত থেকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলেও নিম্ন আদালত জেলে পাঠাচ্ছে। আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতারের পর আদালতে নেওয়া হলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মব সৃষ্টি করে মারধর ও শরীরে পচা ডিম মারা হচ্ছে। অধিকাংশ নেতাকর্মী জামিন না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে রয়েছেন। ফলে অনেক পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের দাবি-বগুড়ার সাতটি আসনে তাদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ভোট আছে। তাদের ভোট যেদিকে পড়বে তারাই নির্বাচিত হবেন। জামায়াতের বাক্সে তাদের ভোট পড়তে পারে!

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোশারফ হোসেন জানান, বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি। নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা কখনো পরাজিত হননি। এবার বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুটি আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বলেন, বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারেক রহমান দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। বগুড়া-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি (মোশারফ) জানান, আসনটি বিএনপির মীর শাহে আলমকে না দিয়ে নাগরিক ঐক্যর মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দিলেও কোনো সমস্যা নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে নির্বাচিত করা হবে। বগুড়ার সাতটি আসনেই বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয় হবেন বলে তিনি শতভাগ আশা করেন।

বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল হক সরকার ও শহর শাখার সেক্রেটারি আসম আবদুল মালেক বলেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তারা প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের ওপর অত্যাচার জুলুম করেননি। এমনকি নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলাও করা হয়নি। এসব কারণে প্রতিটি আসনে জামায়াতের ভোট বেড়েছে। এছাড়া নির্যাতিত দলের (আ.লীগ) ভোট জামায়াতের বাক্সে পড়বে। এসব কারণে তারা (জামায়াত) বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ), বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া), বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ শাহবুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা প্রমুখ মাঠে রয়েছেন।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমকে সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে প্রার্থী করা হয়নি। এ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে তিনি চারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একবারও বিজয়ী হতে পারেননি। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি জামাল পাশা ও বাসদের মাসুদ পারভেজও মাঠে রয়েছেন।

বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে বিএনপির প্রার্থী আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার। জামায়াতে প্রার্থী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের। ইসলামী আন্দোলনের শাজাহান তালুকদার ও বাসদের সুরেশ চন্দ্র দাস।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন। জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। বাসদের সাইফুজ্জামান টুটুল, ইসলামী আন্দোলনের ইদ্রিস আলী প্রার্থী।

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। জামায়াতের দবিবুর রহমান, বাসদের সন্তোষ সিং, ইসলামী আন্দোলনের মীর মাহমুদুর রহমান।

বগুড়া-৬ আসন (সদর) আসনে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন খালেদা জিয়া। এবার তার স্থলে ছেলে তারেক রহমানকে প্রার্থী করা হয়েছে। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল। বাসদের অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী ও ইসলামী আন্দোলনের আনম মামুনুর রশিদ।

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের অধিকাংশ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী। বাসদের শহিদুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম।

এই বিভাগের আরও খবর